কেনো জ্বলছে বাংলাদেশ,ঠিক কী ঘটেছে ওপার বাংলায়? কোটা আন্দোলনের কারন কি? জেনে নিন বিস্তারিত

কোটা আন্দোলনঃ বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় সব বন্ধ হয়ে গেছে। কলেজ ক্যাম্পাসে ছোড়া হচ্ছে টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট। বাংলাদেশের কলেজ ক্যাম্পাসগুলি আজ রক্তাক্ত। এখন প্রশ্ন হলো কেনো এই পরিস্থিতি? কিসের জন্য ছাত্রছাত্রীরা আন্দোলন করছে? ছাত্রদের ওপরেই বা কেন পাল্টা আক্রমণ করা হচ্ছে? চলুন বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক ।  আজকের এই পর্বে বাংলাদেশর কোটা আন্দোলন নিয়ে আলোচনা করবো, যা দীর্ঘদিন ধরে একটি বিতর্কিত এবং আলোচিত বিষয়। বলা চলে যার জন্য জ্বলছে বাংলাদেশ।


শুরু করার আগে জানিয়ে রাখি, বেঙ্গল স্কলার একটি নিরপেক্ষ সংস্থা, যার কোনো রাজনৈতিক রং নেই। আমরা প্রত্যেকেই জানি, সবচেয়ে শান্তিপ্রিয় এবং প্রেমময় দেশগুলির মধ্যে একটি হলো বাংলাদেশ। আমরা প্রত্যেকেই বাংলাদেশের জন্য প্রার্থনা করছি যাতে দ্রুত পরিস্তিতি স্বাভাবিক হয়ে উঠে।


কোটা আন্দোলন কি? ছাত্রছাত্রীরা কিসের জন্য আন্দোলন করছে এবং কেন তাদের পাল্টা আক্রমণ করা হচ্ছে?

আজকের এই পরিস্থিতির কারণ জানতে ফিরে যেতে হয় পুরোনো ইতিহাসে। দিনটা ছিল ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি।বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন।  সেদিন রাস্তায় নেমেছিল হাজারো বাঙালি ছাত্রছাত্রী। তাদের দাবি ছিল বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। এই দাবি মেনে নিতে নারাজ তৎকালীন পাকিস্তান সরকার। অহংকারী পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে গুলি চালানো হলে পাঁচজন ছাত্র নিহত হন। আর সেখান থেকেই স্বাধীন রাষ্ট্র গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখে বাংলাদেশ।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে হাতিয়ার তুলে নেয় দেশের সাধারণ মানুষ, শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। আর ১৯৭১ সালে পৃথিবীর মানচিত্রে জন্ম নেয় স্বাধীন বাংলাদেশ। দেশ স্বাধীনের পেছনে যারা নিজের জীবন বলিদান দিয়েছিলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান জানিয়ে সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ কোটা বরাদ্দ করেন।আজকের দিনে দাঁড়িয়ে এই কোটা ব্যবস্থা বিশাল আকার ধারণ করেছে। সাধারণ যুব সমাজের দাবি, মুক্তিযোদ্ধাদের ৩০ শতাংশ কোটা সরিয়ে ফেলতে হবে। আপনার মনে হতে পারে, এরা কি অকৃতজ্ঞ? যাদের প্রাণের বিনিময়ে আজ বাংলাদেশ পৃথিবীর মানচিত্রে স্থান পেয়েছে, তাদের অধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার দাবি করছে। বিষয়টি ঠিক এরকম নয়। মুক্তিযোদ্ধারা ছিলেন খুব সাধারণ পরিবারের। সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে তাদের যোগ্যতাও ছিল না। সেই কোটায় চাকরি পেতেন তাদের ছেলে-মেয়েরা। এই পর্যন্ত ঠিক ছিল। কিন্তু বর্তমান সময়ে দেখা যাচ্ছে, মুক্তিযোদ্ধারা তো নয়ই, এমনকি তাদের ছেলে-মেয়েরাও নয়, এই কোটা ভোগ করছেন তাদের নাতি-নাতনিরা। এটা নিয়েই সাধারণ যুব সমাজের দাবি, কেন মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনিরা এই কোটা ভোগ করবে? কারণ তারা তো দেশ স্বাধীনের সাথে কোনোভাবেই যুক্ত নয়।নারী কোটা, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটা,প্রতিবন্ধী কোটা,জেলা কোটা, সব কোটা মিলিয়ে প্রায় ৫৬ শতাংশ সীট আগে থেকেই রিজার্ভ থাকে। সরকার যখনই কোনো চাকরির নোটিশ প্রকাশ করে, আগে থেকেই ৫৬ শতাংশ সীট কোটার মাধ্যমে বুক থাকে। বাকি মাত্র ৪৪ শতাংশ সীট থাকে মেধা তালিকার জন্য। এই নিয়েই সাধারন  যুব সমাজের কোটা আন্দোলনে যা বিশাল আকার ধারন করেছে।


২০১৮ সালের কোটা আন্দোলন

২০১৮ সালে বাংলাদেশের সাধারণ যুব সমাজ মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বরাদ্দকৃত ৩০ শতাংশ কোটা সরিয়ে দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছিল। তাদের মূল দাবি ছিল কেবলমাত্র মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা বাতিল করা। তবে সেই সময় সরকার আন্দোলনকারীদের দাবি মেনে নিয়ে সমস্ত কোটা ব্যবস্থা বাতিল করে দেয়। এর ফলে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে মেধার ভিত্তিতে সমান অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়, কিন্তু এর ফলে বঞ্চিত হয় প্রতিবন্ধী, নারী, এবং পিছিয়ে পড়া উপজাতি গোষ্ঠীর মানুষ।২০১৮ সালে কোটা ব্যবস্থা বাতিলের পর প্রতিবন্ধী, নারী, এবং উপজাতি গোষ্ঠী হাই কোর্টে মামলা করে এবং মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারও কোটা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আপিল করে।


বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি

২০২৪ সালের ৫ই জুন বাংলাদেশের হাই কোর্ট জানায় যে, ২০১৮ সালে কোটা ব্যবস্থা পুরোপুরি তুলে নেওয়া অনৈতিক ছিল। তাই হাই কোর্ট আবারো সেই পুরনো কোটা সিস্টেম চালু করার নির্দেশ দেয়। এই নির্দেশের পরপরই ২০১৮ সালের মতোই আন্দোলনকারীরা আবারো রাস্তায় নেমে আসে।২০২৪ সালের কোটা আন্দোলনকারীরা দাবি করছেন যে, সম্পূর্ণ কোটা ব্যবস্থা বাতিল না করে সেটাকে সংস্কার করা হোক। কারণ যোগ্য ব্যাক্তি ছাড়াও ভুয়ো সার্টিফিকেট বানিয়ে অনেকে সুযোগের অপব্যবহার করছে। এরপর বাংলাদেশ সরকার সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে।সুপ্রিম কোর্ট ৭ই আগস্ট পর্যন্ত হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ (স্টে) জারি করেছে। এরপরেও  আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করেছে। ছাত্রছাত্রীরা আবারো রাস্তায় নেমে এসেছে এবং আন্দোলন করছে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেছে, এবং সংঘর্ষের ফলে ক্যাম্পাসগুলো রক্তাক্ত হয়ে উঠেছে। টিয়ার গ্যাস এবং রাবার বুলেটের ব্যবহার ঘটছে।


আরো জানতে নজর রাখুন আমাদের ওয়েবসাইটে : Bengal Scholar

কেন রক্তাক্ত বাংলাদেশ? কোটা আন্দোলনের বিস্তারিত আরো জানুন এই প্রতিবেদনে : Click here

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

Leave a Comment