মহালয়ার ইতিহাস: আর কিছু দিন বাদেই বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপূজা। মহালয়ার দিন থেকেই যেন পূজার অপেক্ষার প্রহর শুরু হয়ে যায়। অনেকেই মনে করেন, মহালয়া মানেই দুর্গাপূজার সূচনা। কিন্তু তোমাদের জানিয়ে রাখি, মহালয়ার সাথে দুর্গাপূজার কোনো সরাসরি সম্পর্ক নেই। হ্যাঁ, ঠিকই পড়েছো! মহালয়া এবং দুর্গাপূজা দুটি সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। তাহলে তোমাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে—মহালয়া আসলে কী? আজকের এই প্রতিবেদনে তোমাদের জানাবো মহালয়ার ইতিহাস।
আলোচ্য বিষয়
Toggleমহালয়ার ইতিহাস!মহালয়া আসলে কী
মহালয়া শব্দের অর্থ “মহান আলো” বা “মহান আশ্রয়,” যা এক বিশেষ ধর্মীয় আচারকে নির্দেশ করে। এই দিনে পিতৃপক্ষের সমাপ্তি ঘটে এবং অমাবস্যার সূচনা হয়। হিন্দু শাস্ত্রে মহালয়ার সাথে গুরুত্বপূর্ণ যোগ রয়েছে মহাভারতের। মহালয়ার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ কাহিনী হল কর্ণের জীবন ও মৃত্যুর পরবর্তী ঘটনা।মহাভারত অনুসারে, কর্ণ কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে মৃত্যুবরণ করার পর তার আত্মা স্বর্গে যায়। সেখানে তাকে স্বর্ণ ও রত্ন খাদ্য হিসেবে দেওয়া হয়, যা দেখে কর্ণ বিস্মিত হন এবং কারণ জিজ্ঞাসা করেন। তখন তাকে বলা হয়, যে তিনি জীবদ্দশায় স্বর্ণ দান করেছিলেন কিন্তু তার পিতৃপুরুষদের উদ্দেশ্যে কোনো খাদ্য বা পানীয় উৎসর্গ করেননি। কর্ণ জানান, তিনি তার পিতৃপুরুষদের পরিচয় জানতে পারেন মৃত্যুর ঠিক একদিন আগে, তাই তাদের উদ্দেশ্যে কিছু দান করার সুযোগ পাননি।এই পরিস্থিতি দেখে কর্ণের নির্দেশে, ভাদ্র মাসের কৃষ্ণ প্রতিপদ তিথিতে তিনি মর্ত্যে ফিরে আসেন এবং ষোল দিনের জন্য পিতৃপুরুষদের উদ্দেশ্যে খাদ্য ও জল প্রদান করেন। এই ষোল দিনকেই বলা হয় পিতৃপক্ষ, যার শেষ দিনটিই মহালয়া। আশ্বিনের অমাবস্যা তিথিতে কর্ণ শেষবারের মতো জল প্রদান করে স্বর্গে ফিরে যান।হিন্দু শাস্ত্রে বিশ্বাস করা হয়, জীবিত ব্যক্তির তিন পুরুষ পর্যন্ত আত্মারা পিতৃলোকে বাস করে, যা স্বর্গ ও মর্ত্যের মাঝামাঝি একটি স্থান। পিতৃলোকের শাসক হিসেবে যমরাজকে মানা হয়। সনাতন ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী, মহালয়ার দিনে প্রয়াত আত্মারা মর্ত্যে আসেন এবং তাঁদের উদ্দেশ্যে জল ও খাদ্য প্রদান করা হয়। প্রয়াত আত্মাদের এই সমাবেশকে বলা হয় “মহালয়।”
এরকম জানা আজনা তথ্য জানতে নজর রাখুন এই ওয়েবসাইটেঃ Click here
মহালয়ার পৌরাণিক কাহিনী
মহালয়ার সাথে জড়িত আছে রামায়ণের এক ঐতিহাসিক এবং পৌরাণিক ঘটনা। বিশ্বাস করা হয়, শ্রী রামচন্দ্র রাবণকে বধ করার আগে দেবী দুর্গার পূজা করেন। সাধারণত দুর্গাপূজা বসন্তকালে পালিত হলেও রামচন্দ্র আশ্বিন মাসে এই পূজার আয়োজন করেন, যা অকালবোধন নামে পরিচিত। তিনি দেবী দুর্গার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন এবং তাঁর আশীর্বাদ লাভ করেন। এরপর থেকেই আশ্বিন মাসে দুর্গাপূজা পালনের ঐতিহ্য শুরু হয়, যা মহালয়ার মাধ্যমে সূচিত হয়।
মহিষাসুরমর্দিনী ও বেতার সম্প্রচার
মহালয়া দিনটির আরেকটি বড় বৈশিষ্ট্য হল “মহিষাসুরমর্দিনী” নামক একটি বেতার অনুষ্ঠানের সম্প্রচার। এটি ১৯৩১ সালে প্রথম আকাশবাণী কলকাতা থেকে সম্প্রচারিত হয় এবং আজও সেই ঐতিহ্য বজায় রয়েছে। ভোরবেলা মানুষ এই অনুষ্ঠানটি শুনতে জড়ো হয়। বিখ্যাত বাচিকশিল্পী বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে চণ্ডীপাঠ ও দেবী দুর্গার মাহাত্ম্য বর্ণিত এই অনুষ্ঠান আজও সকল বয়সের মানুষের মধ্যে সমানভাবে জনপ্রিয়। এই অনুষ্ঠানটি মূলত দেবী দুর্গার মহিষাসুর বধের কাহিনীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে, যা শ্রোতাদের মধ্যে এক বিশেষ আবেগ জাগিয়ে তোলে।
মহালয়ার ইতিহাস সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুনঃ Click here