23 শে জানুয়ারি সম্পর্কে বক্তব্য: জয় হিন্দ! দেশসেবা যার জীবনের মন্ত্র, ভারত মাতার সেই বীর সন্তান নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে তাঁর নাম চিরজীবন স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তিনি তাঁর সমস্ত জীবন ভারতমাতার মুক্তির জন্য উৎসর্গ করেছিলেন। তাঁর অমোঘ ঘোষণা “তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেবো” আজও আমাদের রক্তকে উজ্জীবিত করে, প্রেরণা দেয় দেশের প্রতি কর্তব্য পালন করতে।আজ ২৩ শে জানুয়ারি, আমাদের জাতীয় নেতা, দেশের দিশারী নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর জন্মদিন। এই বিশেষ দিনটি আমরা প্রতি বছর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সঙ্গে উদযাপন করি। আমাদের স্কুল, কলেজ, ক্লাব, অফিস, বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানেও এই দিনটি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে পালন করা হয়।আজকের প্রতিবেদনে আমি আপনাদের জন্য উপস্থাপন করেছি 23 শে জানুয়ারি সম্পর্কে বক্তব্য, যা নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মজয়ন্তী উদযাপনের অনুষ্ঠানে পাঠ করতে পারবেন।
আলোচ্য বিষয়
Toggle23 শে জানুয়ারি সম্পর্কে বক্তব্য
আজকের এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পেরে এবং আমাদের জাতীয় নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পেরে আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি।”তাই, কিছু বলার আগে সর্বপ্রথম সশ্রদ্ধ প্রণাম জানাই আমাদের জাতীয় নেতা নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর আবক্ষ মূর্তির চরণ যুগলে। এখানে উপস্থিত সমস্ত মাননীয় সভ্য মণ্ডলীর প্রতি আমার প্রণাম ও শ্রদ্ধা। আমার ছোট ভাই-বোন এবং আমার সমবয়সী সকলের প্রতি রইল আন্তরিক ভালোবাসা।”
23 শে জানুয়ারি বক্তব্য: বংশ পরিচয় ও শিক্ষা জীবনের আলোকে নেতাজির জীবন
পরাধীন ভারতবাসীর কাছে যার আহ্বান ছিল, “তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব,” তিনিই তরুণ ভারতবাসীর রক্তে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষার বীজ ছড়িয়ে দেওয়া প্রিয় নেতা নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে সাহস, ত্যাগ, বীরত্ব ও দেশপ্রেমের এক নতুন ইতিহাস তিনিই সৃষ্টি করেছেন।সুভাষচন্দ্র বসু ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে ২৩ জানুয়ারি উড়িষ্যার কটক শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম জানকীনাথ বসু। তিনি ছিলেন সরকারি উকিল এবং মাতা ছিলেন প্রভাবতী দেবী। তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয় কটক শহরেই। কটকের রেভিনসন কলেজিয়েট স্কুল থেকে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে শুরু হয় তাঁর কলেজীয় শিক্ষা। সেখান থেকে তিনি দর্শনশাস্ত্রে অনার্সসহ বিএ পাস করেন। পরে বিলেতে গিয়ে আইসিএস পরীক্ষায় চতুর্থ স্থান অধিকার করেও তিনি ব্রিটিশ সরকারের অধীনে চাকরি নিতে অস্বীকৃতি জানান।
কর্মজীবনের মাধ্যমে সমাজে নেতাজির অবদান
ভারতের ইতিহাসে সুভাষচন্দ্র বসু ছিলেন কৃতি, সফল ও বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্ব। নেতাজির তারুণ্য, কর্মশক্তি, সংগঠনিক ক্ষমতা, চারিত্রিক দৃঢ়তা ও নেতৃত্বদানের ক্ষমতা সকলকে অভিভূত করেছিল। ১৯২১ সালের ১৬ জুলাই সুভাষচন্দ্র বসু দেশে ফিরে স্বদেশ সেবাকে জীবনের লক্ষ্য স্থির করেন। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের সহযোগী হয়ে দেশের কাজ শুরু করেন।তাঁর জনপ্রিয়তা ও নেতৃত্বদানের বিস্ময়কর ক্ষমতা দেখে ইংরেজ সরকার ভীত হয়ে তাঁকে একাধিকবার কারাগারে প্রেরণ করে। তরুণ বয়সেই তিনি একজন প্রিয় নেতা হয়ে ওঠেন। এর ফলে তিনি দুবার কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন। একবার কলকাতার মেয়র হন, পরে হরিপুরা ও ত্রিপুরা কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন।তবে মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে আদর্শগত সংঘাত, কংগ্রেসের বৈদেশিক ও অভ্যন্তরীণ নীতির প্রকাশ্য সমালোচনা এবং বিরুদ্ধ মত প্রকাশের কারণে তাঁকে পদত্যাগ করতে হয়। তিনি মনে করতেন, গান্ধীজীর অহিংসা ও সত্যাগ্রহের নীতি ভারতের স্বাধীনতা লাভের জন্য যথেষ্ট নয়। এই কারণেই তিনি সশস্ত্র সংগ্রামের পথ বেছে নিয়েছিলেন। তিনি ফরওয়ার্ড ব্লক নামে একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন।
আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠন: ইতিহাসের এক গৌরবময় অধ্যায়
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ঘোষিত হওয়ার পর নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ব্রিটিশদের দুর্বলতাকে স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য একটি সুবর্ণ সুযোগ হিসেবে দেখেন। যুদ্ধের সূচনালগ্নে ইংরেজ সরকারের নজর এড়িয়ে তিনি সোভিয়েত ইউনিয়ন, জার্মানি এবং জাপান ভ্রমণ করেন। ভারতে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালানোর জন্য সহযোগিতা লাভের উদ্দেশ্যে, জাপানি সমর্থনে এবং প্রবাসী বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর সক্রিয় সহযোগিতায়, প্রবাসী ভারতীয় এবং জাপান বন্দি ভারতীয়দের নিয়ে তিনি আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠন করেন এবং এর নেতৃত্ব দেন।”দিল্লি চলো” স্লোগান দিয়ে নেতাজির দুর্জয় বাহিনী বার্মার সীমান্ত অতিক্রম করে ইম্ফলে প্রবেশ করে। এর পরবর্তী সময়ে জাপানের তাইহোকু বিমানবন্দর থেকে তিনি বিমানে যাত্রা করেন আরও সাহায্য পাওয়ার আশায়। তবে এরপর থেকে তাঁর আর কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
নেতাজির মৃত্যুর রহস্য
১৯৪৫ সালের বিমান দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে কি না, তা আজও রহস্যে আবৃত। এ বিষয়ে বহু কমিশন গঠিত হলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায়নি। বিভিন্ন তথ্য ও দৃষ্টান্ত এই রহস্যকে আরও জটিল করেছে এবং দেশের জনগণের মনে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।আজও দেশবাসীর দাবি, নেতাজির যথার্থ মূল্যায়ন হয়নি। তবে এটি নিঃসন্দেহে বলা যায় যে তাঁর মৃত্যুঞ্জয় উপস্থিতি যুগ থেকে যুগান্তরে মানুষের মুক্তি সংগ্রামের চেতনায় চিরন্তনভাবে বিরাজমান থাকবে। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু এক উজ্জ্বল ও মহান চরিত্র।২০২১ সালে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নেতাজির জন্মবার্ষিকীকে জাতীয় পরাক্রম দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন, যা তাঁর অবদানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধার প্রতীক।
আমাদের সবার উচিত নেতাজির জীবনের আদর্শ থেকে শিক্ষা নেওয়া। দেশপ্রেম, আত্মত্যাগ, এবং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে আমরা আমাদের সমাজ ও জাতিকে উন্নতির পথে নিয়ে যেতে পারি। সুভাষচন্দ্র বসু শুধু একজন নেতা নন, তিনি একটি চেতনা, যা যুগ যুগ ধরে আমাদের প্রেরণা জোগাবে।23 শে জানুয়ারি সম্পর্কে বক্তব্য এখানেই শেষ করছি এই প্রত্যাশায় যে, আমরা সবাই নেতাজির আদর্শকে মনে রেখে আমাদের দায়িত্ব পালন করব এবং দেশের উন্নতিতে অবদান রাখব।
23 শে জানুয়ারি সম্পর্কে বক্তব্য পরিবেশন করতে ও নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর জীবন সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন: Click Here
১) নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর কততম জন্মদিন ২০২৫?
উঃ ২০২৫ সালে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৮তম জন্মদিন হবে।
২) সুভাষচন্দ্র বোসকে নেতাজি উপাধি কে দিয়েছিলেন?
উঃ সুভাষচন্দ্র বসুকে “নেতাজি” উপাধি প্রথম দেন জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টে প্রবাসী ভারতীয়রা।
৩) সুভাষ চন্দ্র বসুর বিখ্যাত উক্তি কি?
উঃ সুভাষ চন্দ্র বসুর বিখ্যাত উক্তি , “তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব,” ।
৪) 23 জানুয়ারি কেন পালন করা হয়?
উঃ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে 23 জানুয়ারি নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু জন্ম গ্রহন করেন তাই ২৩ শে জানুয়ারি দিনটি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিন হিসেবে পালন করা হয়।
৫) নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর জন্মদিন কিভাবে পালন করা হয়?
উঃ নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিন, ২৩ জানুয়ারি, জাতীয় পরাক্রম দিবস হিসেবে পালিত হয়। এই দিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি, সেমিনার, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং র্যালি আয়োজন করা হয়, যেখানে নেতাজির দেশপ্রেম ও সংগ্রামী জীবনের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।
৬) আজাদ হিন্দ ফৌজ কত সালে গঠিত হয়?
উঃ আজাদ হিন্দ ফৌজ ১৯৪৩ সালে গঠিত হয়।
৭) দিল্লির চলো কে ধ্বনি তুলেছিলেন?
উঃ “দিল্লি চলো” স্লোগানটি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু তুলেছিলেন।
৮) সুভাষ চন্দ্র বসু কেন কংগ্রেস ত্যাগ করেন?
উঃ সুভাষ চন্দ্র বসু কংগ্রেস ত্যাগ করেন কারণ তিনি মহাত্মা গান্ধীর অহিংসা ও সত্যাগ্রহ নীতির সাথে একমত ছিলেন না। তিনি মনে করতেন যে, ভারতের স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র সংগ্রাম প্রয়োজন। তাঁর আদর্শগত সংঘাত এবং কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ নীতির বিরোধিতার জন্য তিনি পদত্যাগ করেন।
স্বামী বিবেকানন্দের বাণী PDF! সাফল্যের বাণী গুলো দেখে নিনঃ Click here