ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন এর জীবনী বাংলায়! সহজ সরল ভাষায়

ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন এর জীবনী

সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন এর জীবনী:সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন ছিলেন একজন অসাধারণ ব্যক্তিত্ব, যিনি শিক্ষা, দার্শনিক চিন্তা এবং নেতৃত্বের মাধ্যমে ভারতের ইতিহাসে গভীর প্রভাব ফেলেছেন। একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে তিনি ভারতের উপরাষ্ট্রপতি ও রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন, যেখানে তিনি তার প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতার মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখেন। তিরুত্তানির এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও তিনি মেধা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে দেশের অন্যতম প্রধান শিক্ষাবিদ ও দার্শনিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন। তাঁর জন্মদিন, ৫ই সেপ্টেম্বর, ভারতে ‘শিক্ষক দিবস’ হিসাবে উদযাপিত হয়, যা শিক্ষকদের প্রতি তাঁর গভীর শ্রদ্ধা ও শিক্ষার প্রতি তাঁর অঙ্গীকারকে সম্মান জানায়। আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন এর জীবনী সম্পর্কে জানবো।

 

সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন এর জীবনী( Sarvepalli Radhakrishnan Biography in Bengali)

ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ ভারতবর্ষের অন্যতম মহান দার্শনিক ছিলেন। তাঁর শিক্ষাজীবন ও কর্মজীবন শিক্ষার প্রতি গভীর ভালোবাসা ও অঙ্গীকারের প্রতিফলন। তিনি স্বাধীন ভারতের প্রথম উপরাষ্ট্রপতি এবং দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। তিরুত্তানির এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও তিনি মেধা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে দেশের অন্যতম প্রধান শিক্ষাবিদ ও দার্শনিক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে তিনি অসামান্য অবদান রেখেছেন। রাধাকৃষ্ণাণের জীবনের মূল লক্ষ্য ছিল দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি সাধন করা এবং যুব সম্প্রদায়কে সঠিক পথে পরিচালিত করা। তাঁর জন্মদিন, ৫ই সেপ্টেম্বর, ভারতে ‘শিক্ষক দিবস’ হিসাবে উদযাপিত হয়, যা শিক্ষকদের প্রতি তাঁর গভীর শ্রদ্ধা ও শিক্ষার প্রতি তাঁর নিষ্ঠার প্রতিফলন।

 

বিষয়সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন এর জীবনী
জন্ম১৮৮৮ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর
পিতার নামসর্বপল্লী বীরাস্বামী
মাতার নামসীতাম্মা
মৃত্যু১৯৭৫ সালের ১৭ই এপ্রিল

 

জন্ম ও পরিচয়

১৮৮৮ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর, তামিলনাড়ুর তিরুত্তানিতে, একটি তেলেগুভাষী নিয়োগী ব্রাহ্মণ পরিবারে সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণের জন্ম। তাঁর পিতার নাম সর্বপল্লী বীরাস্বামী, যিনি স্থানীয় জমিদারের অধীনে রাজস্ব বিভাগে স্বল্প বেতনের কর্মচারী ছিলেন। তাঁর মাতার নাম ছিল সীতাম্মা। রাধাকৃষ্ণাণের পরিবার অন্ধ্রপ্রদেশের নেলোর জেলার সর্বপল্লী গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা ছিল। তাঁদের সংসারে দারিদ্র্য ছিল নিত্যসঙ্গী।

 

Teachers Day Speech In Bengali : সহজ সরল ভাষায় শিক্ষক দিবসের বক্তব্য: Click here 

 

শিক্ষাজীবন

সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণের প্রাথমিক শিক্ষা তিরুত্তানির কে. ভি. হাইস্কুলে সম্পন্ন হয়। তিনি ছোটোবেলা থেকেই অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন। তাঁর শিক্ষা গ্রহণে বিভিন্ন বৃত্তি সহায়ক ছিল। ১৮৯৬ সালে তিনি তিরুত্তানির হার্মেনস্বার্গ ইভানজেলিক্যাল মিশন স্কুলে ভর্তি হন এবং পরে ওয়ালাজাপেটের সরকারি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়েও পড়াশোনা করেন। এরপর ভেলোরের ভুরহিস কলেজ থেকে এফ.এ. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি ১৬ বছর বয়সে মাদ্রাজ খ্রীস্টান কলেজে ভর্তি হন। দর্শনে তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল ‘বেদান্তের নীতিশাস্ত্র এবং তার অধিবিদ্যাগত অনুমান’। তাঁর গবেষণামূলক প্রবন্ধটি অধ্যাপক অ্যালফ্রেড জর্জ হগ অত্যন্ত প্রশংসা করেন, যা পরে প্রকাশিত হয়। তখন রাধাকৃষ্ণাণের বয়স ছিল মাত্র ২০।

 

কর্মজীবন

এম.এ. পাস করে রাধাকৃষ্ণাণ মাদ্রাজ প্রাদেশিক শিক্ষা পরিষেবায় যোগ দিয়ে মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন। ১৯১১ সালে তিনি সহকারি অধ্যাপক পদে উন্নীত হন এবং ১৯১৬ সালে রাজামুন্দ্রী কলেজে অধ্যাপক হিসাবে যোগদান করেন। ১৯১৮ সালের জুলাই মাসে মহীশূরের মহারাজা কলেজে যোগ দেন। তিন বছর পর, ১৯২১ সালে স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের আমন্ত্রণে তিনি কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পঞ্চম জর্জ অধ্যাপক পদে নিযুক্ত হন। ১৯৩০ সালে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক ধর্ম বিভাগে হ্যাস্কেল লেকচারার হিসাবে যোগ দেন এবং ১৯৩৯ সালে বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাইস চ্যান্সেলর হন। ১৯৪৮ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি এই পদে ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি ১৯৫২ সাল থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত ভারতের উপরাষ্ট্রপতি এবং ১৯৬২ সাল থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির পদে আসীন ছিলেন।

 

গ্রন্থরচনা

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রাধাকৃষ্ণাণের দার্শনিক বক্তৃতা খুবই প্রশংসিত হয়েছে। তিনি একাধিক দার্শনিক গ্রন্থ রচনা করেছেন, যা পণ্ডিত মহলে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। তাঁর “অ্যান আইডিয়ালিস্ট ভিউ অফ লাইফ” গ্রন্থটির জন্য তিনি নোবেল পুরস্কারের জন্য বিবেচিত হয়েছিলেন, যদিও শেষ পর্যন্ত পুরস্কার পাননি। ১৯৭৫ সালে ‘প্রগতিতে ধর্মের অবদান’ বিষয়ক রচনার জন্য তিনি ‘টেম্পলটন’ পুরস্কার পান। তাঁর প্রথম গ্রন্থ ‘দ্য ফিলোজফি অফ রবীন্দ্রনাথ টেগোর’ এবং দ্বিতীয় গ্রন্থ ‘দ্য রেইন অফ রিলিজিয়ন ইন কনটেমপোরারি ফিলোজফি’ উল্লেখযোগ্য।

 

বিজ্ঞানচর্চায় জগদীশ চন্দ্র বসু বিজ্ঞানী রচনা: Click here 

 

ভারত সরকারের প্রতিনিধিত্ব

১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার পর, সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ ইউনেস্কোতে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন এবং ১৯৪৯ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত সোভিয়েত ইউনিয়নে ভারতের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। তিনি ভারতের গণপরিষদেরও সদস্য ছিলেন। ১৯৫২ সালে ভারতের প্রথম উপ-রাষ্ট্রপতি এবং ১৯৬২ সালে ভারতের দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হন।

 

বৈবাহিক জীবন

পারিবারিক রীতি অনুযায়ী, ১৬ বছর বয়সে রাধাকৃষ্ণাণ তাঁর দূর সম্পর্কের আত্মীয়া শিবাকামুর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁদের পাঁচ কন্যা এবং এক পুত্র সন্তান ছিল। তাঁদের পুত্র সর্বপল্লী গোপাল ছিলেন একজন খ্যাতিমান ইতিহাসবিদ। রাধাকৃষ্ণাণের স্ত্রী শিবাকামু ১৯৫৬ সালের ২৬শে নভেম্বর পরলোক গমন করেন।

 

সম্মাননা

দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে রাধাকৃষ্ণাণ অধ্যাপনার জন্য আমন্ত্রিত হয়েছেন। ১৯৩১ সালে তিনি ‘নাইট’ উপাধি পান, ১৯৩৮ সালে ব্রিটিশ অ্যাকাডেমির ফেলো হন। ১৯৫৪ সালে তিনি দেশের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান ‘ভারতরত্ন’ পান। ১৯৬১ সালে জার্মান বুক ট্রেডের শান্তি পুরস্কার এবং ১৯৬৩ সালে ব্রিটিশ সরকার দ্বারা ‘অর্ডার অফ মেরিট’এ সম্মানিত হন। ১৯৭৫ সালে তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে টেম্পলটন পুরস্কার পান এবং পুরস্কারের সমস্ত অর্থ অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়কে দান করেন। ১৯৮৯ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ‘রাধাকৃষ্ণাণ স্কলারশিপ’ প্রদান করা শুরু করে, যা পরবর্তীতে ‘রাধাকৃষ্ণাণ সিভেনিং স্কলারশিপ’ নামে পরিচিত হয়।

 

শিক্ষক দিবস

ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ তাঁর জীবনের সমস্ত সময় শিক্ষার উন্নতি, প্রগতি, এবং মানবকল্যাণের কাজে নিবেদন করেছিলেন। তিনি ‘হেল্পএজ ইন্ডিয়া’র অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন, যা দেশের অসহায় বয়স্ক মানুষদের দেখাশোনার জন্য একটি অলাভজনক সংস্থা। ১৯৬২ সালে জাতীয় শিক্ষক সংস্থা তাঁর জন্মদিনটি ‘শিক্ষক দিবস’ হিসাবে পালন করার সিদ্ধান্ত নেয়। যদিও রাধাকৃষ্ণাণ তাঁর জন্মদিন উদযাপনে আপত্তি জানিয়েছিলেন, তবে তিনি প্রস্তাব দেন যে যদি তাঁর জন্মদিন পালিত হয়, তাহলে তা শিক্ষক দিবস হিসাবে পালন করা হোক। সেই থেকে ৫ই সেপ্টেম্বর দিনটি ভারতে ‘শিক্ষক দিবস’ হিসাবে পালন করা হয়। ভারতের বাইরে, অন্যান্য দেশে শিক্ষক দিবস পালিত হয় ৫ই অক্টোবর, তবে ভারতে এটি রাধাকৃষ্ণাণের জন্মদিনের দিনেই পালিত হয়।

 

ব্যবসা করার জন্য লোন চাই?প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনা লোন আপনার জন্য সঠিক অপশন হতে পারে!কিভাবে পাওয়া যাবে মুদ্রা লোন বিস্তারিত জানুন: Click here 

 

জীবনাবসান

অবশেষে ১৯৭৫ সালের ১৭ই এপ্রিল ভারতের চেন্নাইয়ে ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ পরলোক গমন করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। তাঁর মৃত্যুতে ভারতবর্ষ এক বিশিষ্ট দার্শনিক, শিক্ষাবিদ এবং নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তিত্বকে হারিয়েছিল। তাঁর অবদান ও শিক্ষার প্রতি নিবেদন আজও স্মরণীয় এবং প্রেরণাদায়ক হয়ে রয়েছে।

 

সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন এর জীবনী সম্পর্কে আরও জানতে ক্লিক করুনঃ Click here