রাখি বন্ধন উৎসব কেন পালন করা হয়েছিলঃ নমস্কার বন্ধুরা। বেঙ্গল স্কলারে তোমাদের সবাইকে স্বাগতম। আজকের প্রতিবেদনে আমরা আপনাদের জানাবো রাখি বন্ধন উৎসবের কিছু জানা অজানা তথ্য। রাখি বন্ধন ভারত ও বাংলাদেশের একটি বিশেষ উৎসব, যা ভাই ও বোনের ভালোবাসার প্রতীক। বর্তমানে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে এই উৎসবে সবাই অংশগ্রহণ করে। এই দিনটি শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে উদযাপিত হয়। এই দিনে বোনেরা তাদের ভাইদের হাতে রাখি নামে একটি পবিত্র সুতো বেঁধে দেয়, যা ভাইদের সারাজীবনের মঙ্গল কামনা এবং বোনদের সমস্ত বিপদ থেকে রক্ষা করার প্রতীক হিসেবে দেখা হয়।
আলোচ্য বিষয়
Toggleরাখি বন্ধন উৎসব কেন পালন করা হয়েছিল? যা আজও সাধারন মানুষের কাছে অজানা
রাখি বন্ধন উৎসবের সূচনা নিয়ে বেশ কিছু পৌরাণিক ও ঐতিহাসিক কাহিনী প্রচলিত আছে, যেগুলোর মধ্যে কিছু আজও সাধারণ মানুষের কাছে অজানা। রাখি বন্ধনের মূল উদ্দেশ্য হলো ভাই-বোনের মধ্যে মমতা ও সুরক্ষার বন্ধন তৈরি করা, তবে এর পেছনের কিছু কাহিনী আমাদের ইতিহাস ও সংস্কৃতির সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে আছে।
রাখী বন্ধনের পৌরাণিক গল্প
রাখি বন্ধন উৎসবের কিছু অজানা এবং প্রাচীন পৌরাণিক গল্প সম্পর্কে জানলে এই উৎসবের গুরুত্ব আরও গভীরভাবে উপলব্ধি করা যায়। এখানে আমরা সেই পুরোনো দিনের রাখি বন্ধন নিয়ে কিছু কথা, কিছু গল্প এবং ঘটনাকে তুলে ধরেছি, যা রাখি বন্ধন উৎসবের ঐতিহ্যকে ব্যাখ্যা করে।
মহাভারতের কৃষ্ণ ও দ্রৌপদীর গল্প: মহাভারতের কাহিনী অনুযায়ী, শুভদ্রা ছিলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ছোট বোন, এবং পঞ্চপাণ্ডবের পত্নী দ্রৌপদী শ্রীকৃষ্ণকে ভাইয়ের মতো ভালোবাসতেন। কৃষ্ণও দ্রৌপদীকে বোনের মতো স্নেহ করতেন, যা দেখে শুভদ্রা মাঝে মাঝে হিংসা করতেন। একদিন শুভদ্রা তার দাদা শ্রীকৃষ্ণকে জিজ্ঞাসা করলেন, কেন তিনি দ্রৌপদীর প্রতি এত বেশি স্নেহ ও ভালোবাসা অনুভব করেন। কৃষ্ণ উত্তরে বললেন, সঠিক সময় এলে তিনি এর কারণ জানতে পারবেন।
এরপর একদিন, শিশুপাল নামে এক রাজা ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে অত্যন্ত অপমান করেন। সেই সময় কৃষ্ণ ক্রুদ্ধ হয়ে তার সুদর্শন চক্র দিয়ে শিশুপালের শিরচ্ছেদ করেন। তবে সেই প্রক্রিয়ায় কৃষ্ণের হাত কেটে যায়। তখন দ্রৌপদী সেখানে উপস্থিত ছিলেন এবং অবিলম্বে নিজের পরিহিত কাপড়ের একটি অংশ ছিঁড়ে কৃষ্ণের কাটা স্থানে বেঁধে দেন। এর পরিবর্তে, কৃষ্ণ দ্রৌপদীকে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দেন। পরে, যখন কৌরবরা পাশা খেলায় দ্রৌপদীকে অপমান করে তার বস্ত্রহরণ করতে চেষ্টা করেছিল, তখন কৃষ্ণ তার সম্মান রক্ষা করে সেই প্রতিদান দেন। বলা হয়ে থাকে, এই ভাবেই রাখি বন্ধন উৎসবের সূচনা হয়েছিল।এই কাহিনী আমাদের শেখায় যে রাখি বন্ধন শুধু একটি উৎসব নয়, এটি ভাই-বোনের অটুট সম্পর্কের প্রতীক।
লক্ষ্মী দেবী ও বানর রাজ বালির গল্প: একবার, লক্ষ্মী দেবী একটি দরিদ্র নারীর রূপ ধারণ করে বানর রাজ বালির কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করেন। বালি তাকে সাহায্য করতে তার প্রাসাদের দরজা খুলে দেন। এই দানের ফলে সন্তুষ্ট হয়ে লক্ষ্মী দেবী বালির হাতে কাপড়ের একটি টুকরো বেঁধে দেন, যা তাকে সুরক্ষা ও সমৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে দেওয়া হয়। এই ঘটনাটি শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে ঘটেছিল, এবং অনেকে বিশ্বাস করেন, এখান থেকেই রাখি বন্ধন উৎসবের সূচনা হয়।
ভগবান গণেশের দুই পুত্র ও সন্তোষী মাতার গল্প: ভগবান গণেশের দুই পুত্র, শুভ এবং লাভ, তাদের কোনো বোন ছিল না। একদিন তারা ভগবান গণেশের কাছে আবদার করে যে, তারা তাদের বোনের হাত থেকে রাখি পড়তে চায়। গণেশ তখন উপায়ান্তর না দেখে, তার দুই স্ত্রী ঋদ্ধি এবং সিদ্ধির অন্তর থেকে নির্গত অগ্নি থেকে একটি কন্যা সৃষ্টি করেন, যাকে আমরা সন্তোষী মাতা নামে চিনি। সন্তোষী মাতা এরপর তার দুই ভাই, শুভ এবং লাভের হাতে রাখি বেঁধে দেন। অনেকেই মনে করেন, এ থেকেই রাখি উৎসবের প্রচলন হয়।
রাখী বন্ধনের ইতিহাস (ঐতিহাসিক গল্প)
এতক্ষণ আপনারা পড়ছিলেন রাখি বন্ধন উৎসব কেন পালন করা হয়েছিল তার পৌরাণিক গল্প। এখন আমরা জেনে নেবো কিছু ঐতিহাসিক গল্প, যা রাখি বন্ধন উৎসবের ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
রানী কর্ণবতী ও সম্রাট হুমায়ুনের গল্প: মেবারের রাজপুত্র রানী কর্ণবতী এবং মুঘল সম্রাট হুমায়ুনের মধ্যে একটি দৃঢ় ভাই-বোনের সম্পর্ক ছিল। কর্ণবতীর স্বামীর মৃত্যুর পর, যখন গুজরাটের সুলতান বাহাদুর শাহ মেবার আক্রমণ করতে আসে, তখন কর্ণবতী হুমায়ুনের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন এবং একটি রাখি পাঠান। ভাইবোনের সম্পর্কের প্রতীক হিসেবে হুমায়ুন তার বোনের ডাকে সাড়া দিয়ে সৈন্য পাঠিয়ে তাকে এবং তার রাজ্যকে রক্ষা করেন। এভাবেই রাখি বন্ধনের মাধ্যমে ভাই-বোনের সম্পর্কের নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা হয়।
পুরু এবং রোকসানার গল্প: আলেকজান্ডার এবং পুরুর মধ্যে যুদ্ধে পুরু পরাজিত হন। কিন্তু কথিত আছে যে, আলেকজান্ডারের স্ত্রী রোকসানা পুরুকে রাখি পাঠান, তার আবেদন ছিল পুরু যেন আলেকজান্ডারকে হত্যা না করেন। পুরু সেই রাখির সম্মান রেখে আলেকজান্ডারকে রেহাই দেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং রাখি বন্ধন উৎসব: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রাখি বন্ধন উৎসবকে নতুন মাত্রা দেন। তিনি এই উৎসবের মাধ্যমে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক স্থাপন করতে চেয়েছিলেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময়, ঠাকুর রাখি বন্ধন উৎসবের মাধ্যমে ঐক্যের প্রতীক হিসেবে এই উৎসবকে উদযাপন করেন। তিনি হিন্দু ও মুসলমানদের হাতে রাখি বেঁধে ভ্রাতৃত্বের বার্তা প্রচার করেন।
মাল্টি টাস্কিং স্টাফ পদে নিয়োগের পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করলো কমিশন! SSC MTS Exam date 2024 : Click here
রাখি বন্ধন উৎসব কেন পালন করা হয়েছিল এর পৌরাণিক এবং ঐতিহাসিক কাহিনী আরও ভালোভাবে জেনে নিনঃ Click here